শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

মেলা বাণিজ্যের অর্থ আত্মসাৎ ?

মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় : বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ১০৬ জন দেখেছেন

মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি :

 

রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহর গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘প্রেমগোসাই মেলা’। মাসব্যাপী চলা গ্রামীণ মেলাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘প্রেমতলীর মেলা’ নামেও পরিচিত। মেলাটি বসছে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। আশপাশের নানা জায়গা থেকে মেলায় ভিড় করে মানুষ।সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। ফার্নিচার, ক্রোকারিজ মিষ্টি, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে গৃহস্থালির নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে এখানে। মিষ্টি, জিলাপি বানানো হচ্ছে  ৫০টির বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। সকাল থেকেই নাগরদোলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মেলায় দোকানপাট, যাত্রা-সার্কাস, মোটরসাইকেল গ্যারেজ ইত্যাদি থেকে প্রায় কোটি টাকা আয় হয়। এসব টাকা স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-মন্দির-গীরজা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা। কিন্ত্ত মেলা কমিটি কখানোই আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রকাশ করে না। তারা বলেন, যুগের পর যুগ ধরে চলে আশা মেলার আয় দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হলে। এলাকার চিত্র পাল্টে যেতো। তবে সেটা না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির পর থেকে একই অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।এতে জনমনে প্রশ্ন মেলা থেকে আয় হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ যায় কোথায় ? খায় কে ? না কি
আত্মসাৎ।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে
মেলার আয়-ব্যয়ের হিসেব করার দাবি করেছেন গ্রামবাসী। একাধিক বাসিন্দা জানান, এই মেলা আয়োজনের ফলে এলাকার মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা বেরিয়ে যায়। এক শিক্ষক বলেন, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই বেতন দেন না, তায় বিনাবেতনে পড়ার কথা একটা অজুহাত। তিনি বলেন, মেলা থেকে যা আয় হয় তা বিভিন্ন অজুহাতে কমিটির লোকজন আত্মসাৎ করে।
সীমান্তবর্তী ও প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা হওয়ায় মেলায় চলে, জুয়া, অর্ধনগ্ন ও নগ্ন নারীর উদ্যম নৃত্য। মেলাকে কেন্দ্র করে মেলার পার্শ্বেই গড়ে উঠেছে জমজমাট মাদকের হাট, ভাসমান পতিতাদের পদচারণাও রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় পুতুলনাচ, ভ্যারাইটি-শো যাত্রাপালার নামে চলে অশ্লীল, অর্ধনগ্ন ও  নগ্ন নারীর নৃত্য। আর এসব নারী দেহের অশ্লীল নৃত্য উপভোগ করে ১০ বছরের শিশুসহ ৬০ বছরের বৃদ্ধ।  মেলায় বসে হরেক রকমের জুয়ার আসর। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের নামে করা হয় চাঁদাবাজি।
এদিকে কদিন পর এইচএসসি পরীক্ষা। তার আগে রাতভর। মেলার মাইকের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের পড়ালেখা শিকেয় উঠেছে। জনজীবনও দুর্বীসহ হয়ে পড়েছে। আবার প্রত্যন্ত মফস্বল এলাকায় এ রকম প্রকাশ্যে অশ্লীল ও বেহায়াপনায় খোদ আয়োজকদের অনেকে চরম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মেলার কারণে বেড়েছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড এলাকায় দেখা দিয়েছে আইনশৃংঋলার অবনতি। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ও গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিবছর পৌষ- সংক্রান্তির দিনে মেলাটি বসে, চলে মাসব্যাপী। তিনি বলেন, এ জন্য আগাম কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না, প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনো আসে মেলায় যোগ দিতে। সে কারণে সব ধরনের সুবিধা রাখতে আয়োজক কমিটি প্রায় এক মাস আগে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেলার নিরাপত্তার জন্য সারা দিন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এই মেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে গুজিশহর মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুলের উন্নয়ন করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com