রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

সিংড়ায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে সরকারি খাল বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৯৩ জন দেখেছেন

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নাটোরের সিংড়ায় শস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের কৃষকের অল্প খরচে জমিতে সেচ সুবিধা ও ফসলকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা এবং এলাকার কৃষকদের নানাবিধ সুবিধার্থে খনন করা সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ হুলহুলিয়া-টু-সারদানগর খাল অসময়েই শুকিয়ে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা চলছে। জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সরকারি এ খালটি বিক্রয় করে দিয়েছেন।

উন্মুক্ত সরকারি জলাশয়ের মাঝে মাঝেই অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে বিলের মধ্য থেকে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ার একমাত্র বাহন নৌকা চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিকে প্রকৃত মৎস্যজীবী ও দিন মজুররা ওই খালে মাছ ধরতে না পেরে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন অপরদিকে হুমকির মুখে পড়েছে চলনবিলে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য।

অভিযোগ উঠেছে হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চৌগ্রাম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আল তৌফিক পরশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই খালটি বিক্রয় করায় কৃষি জমিতে সেচ শুরুর আগেই শুকিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা।

আর এই খাল চারটি অংশে ভাগ করে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকায় কেনাবেচা হয়েছে বলে ক্রেতা ও নাম প্রকাশে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

বিএডিসি সিংড়া জোনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিংড়ার হুলহুলিয়া-টু-জয়নগর বিল এবং হুলহুলিয়া-টু-সারদানগর (নিয়ামত ব্রাঞ্চ) খালের ৫ কিলোমিটার অংশ পুনঃখনন করা হয়। আর খালটি পুনঃখননের ফলে এলাকার কৃষি জমিতে অল্প খরচে সেচ সুবিধা, কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, বিলের মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ কৃষকের সব কাজে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।

কিন্তু সরজমিনে চোখে পড়ে তার উল্টো চিত্র, হুলহুলিয়া খালের শুরুতেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে অসময়েই বিদ্যুৎ চালিত মোটর দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আলমগীর হোসেন ও বিদ্যুৎ শেখ। এখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালে পরপর আরও পাঁচটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই অংশটি তারা একলাখ ৭০ হাজার টাকায় কিনে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করছেন বলে জানান খালে সেচ কাজে ব্যস্ত বিদ্যুৎ শেখ।

তিনি আরও জানান, খালটি তারা আ.লীগ নেতা আল তৌফিক পরশের কাছ থেকে কিনেছেন।
আর এই খালের পশ্চিমাংশে সারদানগর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত খাল দখল করে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং সেখানে রাত্রি যাপনের ছাউনী ফেলেছেন আওয়ামী লীগ কর্মী মানিক, আজাদুল, হারিছ ও ভুলু মিয়া।

সেখানে দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত মানিক উদ্দিন বলেন, খালের এই অংশটুকু তারা ৭৫ হাজার টাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আল তৌফিক পরশের কাছ থেকে কিনেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান, সরকারি খাল বেচাকেনার সুবাদে কৃষির ক্ষতির পাশাপাশি চলনবিলে মাছ ও অর্থ অনেকেই পকেটে তুলছেন এবং রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে রুপান্তরিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আল তৌফিক পরশ মোবাইল ফোনে খাল বিক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খাল বিক্রয়ের সব অর্থ গ্রামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে তার নিজের কোনো লাভ বা স্বার্থ নেই।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইনে সরকারি খাল দখল করে অসময়ে এভাবে শুকিয়ে মাছ শিকার অবৈধ।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন বলেন, খাল দখলের অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করে দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com