বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

বগুড়ার শিবগঞ্জে ভুল অপারেশনে মারা গেছে এক কলেজ ছাত্র

হাফছা খাতুন, স্টাফ রিপোর্টার:-
  • আপডেট সময় : বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৪৫ জন দেখেছেন

হাফছা খাতুন, স্টাফ রিপোর্টার:-

বগুড়ার শিবগঞ্জে বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াই সরকারী অনুমোদন বিহিন একটি ক্লিনিকের মালিক ও তাঁর পুত্র উভয়ে মিলে ভুল অপারেশন করায় জীবন প্রদীপ নিভে গেছে ফিরোজ নামে ১৭ বছর বয়সের এক কলেজ ছাত্রের।

নিহত ফিরোজ শিবগঞ্জ পৌর এলাকার কানুপুর গ্রামের ছাবেদ আলীর ছেলে। তিনি মহাস্থান মাহি সাওয়ার ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ফিরোজ মিয়া পেটের ব্যথা নিয়ে আসেন শিবগঞ্জ নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে।
সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ক্লিনিক মালিক জানান, এটি তাঁর এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। তা না হলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। ক্লিনিক মালিকের এমন কথা শুনে গ্রামের অতি সাধারণ মানুষ সিকিউরিটি গার্ড ছাবেদ আলী ছেলেকে বাঁচাতে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে বলেন ক্লিনিক মালিককে। ক্লিনিক মালিকের কথামতো অপারেশনের জন্য ১৫ হাজার টাকায় সার্জন হিসেবে ডাঃ আব্দুল হালিমকে বাছাই করা হয়। ফিরোজের পিতা ডাঃ আব্দুল হালিমকে চিনেন না। ক্লিনিক মালিক চালাকি করে সদ্য এমবিবিএস পাশ করা তাঁর পুত্রকে সার্জন ডাঃ আব্দুল হালিম বানিয়ে অপারেশন করান। অপারেশন করার পর ফিরোজের শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পরিবারের লোকজন ২৯ মার্চ ফিরোজকে মুর্মুর্ষু অবস্থায় শিবগঞ্জ উপজেলার আমতলী এলাকায় সূর্য্যহাসি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা জানান, ভূল অপারেশন করা হয়েছে। এপেন্ডিক কাটতে গিয়ে রোগীর খাদ্য নালী কেটে ফেলা হয়েছে।

৫ এপ্রিল তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
৮ এপ্রিল ভোর ৫টায় ফিরোজ মারা যায়।

একদম সুস্থ সবল ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ফিরোজের পিতা মাতাসহ পরিবারের সবাই। নিহত ফিরোজের পিতা একজন অতিশয় সাধারণ সিকিউরিটি গার্ড। তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা করলে তাঁর চাকুরী যাবে। এমনকি মিথ্যা মামলাতেও ফাঁসিয়ে দেয়া হবে। ভয়ে তিনি ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফিরোজের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এ দুনিয়াতে আমার ছেলেকে মেরে ফেলার বিচার পাবো না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। আল্লহ একদিন তাঁদের ন্যায় বিচার করবেন।

নিহত ফিরোজের আলট্রাসনোগ্রাফ রিপোর্টের কোথাও এপেন্ডিসাইটিস এর বিষয় উল্লেখ না থাকা সত্বেও শুধু টাকা নেয়ার লোভে ক্লিনিক মালিক ও তাঁর ছেলে ভুল অপারেশন করে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ফিরোজের পিতা।

এ ব্যাপারে ডাঃ আব্দুল হালিম বলেন, ঘটনার তারিখ ফিরোজ নামে কোন রোগীর অপারেশন আমি করি নি। আগে ওই ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করতাম। নানা অভিযোগের কারণে ওই ক্লিনিকে আর যাই না।

ক্লিনিকের পরিচালক মোহন লাল কানু বলেন, আমার ক্লিনিকে ফিরোজ চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। পরীক্ষা অন্তে ডাঃ হালিমের নেতৃত্বে তাঁর অপারেশন করান হয়। রোগী সুস্থ্য হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে রিলিজ করে নিয়ে যায়। ভুল চিকিৎসার কারণে ফিরোজের মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি দাবী করেন।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম সম্পা বলেছেন, অন্যায়ভাবে ফিরোজকে মেরে ফেলার বিষয়টি সত্য হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় বহু মানুষ অভিযোগ করে বলেছেন, শিবগঞ্জ নার্সিং হোমে মাঝে মাঝেই ভুল চিকিৎসা করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সবশেষে মেধাবী ছাত্র ফিরোজের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com