রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

১৮ই ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয়

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১১৬ জন দেখেছেন

 

মোহাম্মদ আককাস আলীঃ

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী ও বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাঙালি জাতি বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় দিবস উল্লাস হলেও নওগাঁয় পালন করতে পারেনি দেশের সোনার ছেলেরা। দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্থানি সেনা নওগাঁর যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর শুরু হয় বিজয় উল্লাস।
২৫ মার্চ কালো রাতে পাকবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা শুরু করে। এই দিনে পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হয় নওগাঁ। যার ফলে ২৬ মার্চেই নওগাঁ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার শপথ গ্রহণ করে। ২৫ মার্চে ঢাকাসহ দেশের বহু এলাকা পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হলেও নওগাঁ মুক্ত ছিল প্রায় এক মাস। ২১ এপ্রিল দুপূর ১২ টার দিকে বিনা বাধায় হানাদার বাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। ২২ এপ্রিল পাকবাহিনীর অপর একটি কনভয় ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাজশাহী থেকে সড়ক পথে নওগাঁয় প্রবেশ করে। তাদের নির্দেশ মতো ঐদিন রাতে পাকিস্থান রক্ষার লক্ষে শান্তি কমিটি গঠন করে। ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে যায়।
প্রায় সাড়ে ৭ মাস ধরে পাক হানাদার বাহিনীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায়। ১০ ডিসেম্বর জেলার রাণীনগর উপজেলা এবং ১২ ডিসেম্বর পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়। ফলে পার-নওগাঁয় বসবাসকারী সকল অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে নওগাঁ কেডি স্কুলে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, সাবেক থানা চত্বর, আদালত পাড়া ও এসডিও বাসভবন চত্বরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পর জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নওগাঁকে মুক্ত করার প্রস্তুতি নেন মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী। সে অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হতেই পাকিস্থানী সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আর ওই সাত শহীদের রক্তের বিনিময়ে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।
নওগাঁর বীরমুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে “জয় বাংলা জয় বাংলা ” ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। সেই থেকে নওগাঁ হানাদার মুক্ত ১৮ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ দিনটিকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com