সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, কর্তৃপক্ষ নীরব

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪
  • ৭৪ জন দেখেছেন

 

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। সাম্প্রতিক সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাই সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের প্রচুর ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এ সুযোগে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা চিকিৎসক কোন কোম্পানীর ঔষধ লিখছে, তাহা দেখার জন্য রোগীর হাত থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে ছবি উঠানোর জন্য কাড়াকাড়ি শুরু করে। এছাড়া দালালরা নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে পরীক্ষা করার জন্য রোগীদের নানাভাবে প্রলোভন দেখায়। দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি হাসপাতালের বহিঃবিভাগে এমন কর্মকান্ড চলমান থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন সেবা গ্রহীতা অনেক রোগি। কোনো এক অজানা কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন যাবৎ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু এবং বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিনই বহিঃবিভাগে তিন টাকার স্লিপে শত শত শিশু ও নারী-পুরুষ রোগি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের নিকট থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। এছাড়াও প্রতিদিনই অফিস সময়ের আগে-পরে আবাসিক এলাকায় ডাক্তারের বাসায় ও নিকটবর্তী চেম্বারে প্রাইভেটভাবে চিকিৎসা সেবা নেয় রোগীরা। হাসপাতাল থেকে বাসায়, প্রাইভেট চেম্বার সহ প্রায় সব জায়গায় দেখা মিলে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের। তারা ডাক্তারের চেম্বার থেকে রোগী বের হওয়ার সাথে সাথেই প্রেসক্রিপশন চেক করে-কোন কোম্পানীর ঔষধ লিখেছে ডাক্তার। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের দালালরা প্রেসক্রিপশন নিজের হাতে নিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে জোরপূর্বক অনেক রোগীকে নিজেদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও দালাললের দৌরাত্ম্যে রোগী ও তাদের স্বজনরা বিব্রত হয়ে পড়েন। সম্প্রতি চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে আয়োজিত সমন্বয় সভায় মো: মুজিবুল হক মুজিব এমপি বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধের নির্দেশ দিয়ে অসহায় ও গরীব রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়ার আহবান জানান। তাঁর এমন বক্তব্যে সাধারণ রোগিদের মনে আশা জেগেছিলো। কিন্তু, কে শুনে কার কথা? প্রতিদিনই ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও দালালদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সহ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রচুর সংখ্যক রোগী ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। বেলা ১১:৪০মিনিটের সময় ডা. আফরোজা হাশেম নুপুরের চেম্বারেই মার্কস দুধের প্রতিনিধি রাফিজা আক্তারকে ভিজিট করতে দেখা গেছে। এর ৪ মিনিট পর ডাক্তার তার নিজ চেম্বার থেকে অফিস সময় শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আফরোজা হাশেম নুপুর বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলেই আজ বৃহস্পতিবার কিছু সময় আগে হাসপাতাল থেকে বের হয়েছি। অন্যদিন বেলা ১টা পর্যন্ত সরকারি চেম্বারে উপস্থিত থাকি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো: গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সচেতন। ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা যাতে হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কিছুক্ষণ পরপর আমি বহিঃবিভাগে গিয়ে পরিদর্শন করি। তাদেরকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। যেহেতু তারা বিষয়টি মানছেনা, সেহেতু উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com