রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত চাষিরা

মোহাম্মদ আককাস আলী নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৩ মে, ২০২৩
  • ১৩১ জন দেখেছেন

মোহাম্মদ আককাস আলী নিজস্ব প্রতিবেদক :

বরেন্দ্র অঞ্চলে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। চাষিদের দাবি, রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক ও জ্বালানির দাম বাড়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় কেবল ধানের দাম ভালো পেলেই লাভবান হতে পারবেন।
নওগাঁ জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে প্রকাশ, এবছর জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধান থেকে প্রায় ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। ধানের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।
কৃষকে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। সোনালী ধানের শীষে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারিদিক। ইরি-বোরো মৌসুমের ধান ঘরে তুলতে কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এবছর জিরাশাইল, ব্রিআর-২৮, ৪৮, সুবর্ণলতা ও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানে তেমন কোনো রোগবালাই হয়নি। এছাড়া ফলনও হয়েছে ভালো। এবার বাম্পার ফলনের আশা চাষিদের। ন্যায্য মূল্য পেলে এ জেলার মানুষের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
চাষিরা জানান, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে হিসেবে জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে প্রায় ২২-২৬ মণ। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবেন তারা। এতে করে তারা গত বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসলের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
মহাদেবপুর উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের বোরো চাষী পানজু সরদার বলেন, প্রতি বিঘাতে ফলন হচ্ছে ২২-২৬ মণ। এবছর সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। খোলা বাজারে ধানের দাম ১৪০০ টাকা মণ হলে আমরা লাভবান হতে পারবো।
সাপাহার উপজেলার পাতাড়ি গ্রাম থেকে সদর উপজেলার দীঘলির মাঠে ধান কাটার জন্য এসেছেন মামুন হোসেন। তিনি বলেন, এ এলাকায় আগেই ধান কাটা শুরু হয়। গ্রাম থেকে ১০ জন আসছি ধান কাটতে। প্রতি বিঘাতে পাঁচ হাজার টাকা মজুরিতে ধান কাটছি। জমি থেকে রাস্তা পর্যন্ত ধান তুলে দিতে হবে। তারপর মালিকরা বাড়ি নিয়ে মাড়াই করছেন। প্রতিদিন আমাদের প্রায় ১২০০-১৫০০ টাকা আয় হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা চাউল ও ভূষিমাল আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন খান টিপু বলেন, এবছর কৃষকদের ধান উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা তাদের ঘরে ধান মজুত করে রাখবে। সেক্ষেত্রে চালকল ব্যবসায়ীদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হতে পারে। আবার বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে বাড়তি খরচ গুনতে হতে পারে চালকল মালিকদের।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বোরো আবাদের জন্য জেলার ৪০ হাজার জন কৃষককে পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও পাঁচ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরইমধ্যে পাঁচ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com