শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে আব্দুর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ: টাকার অভাবে ভর্তি নিয়ে দু:শ্চিন্তায়

মোহাম্মদ আককাস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় : সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩
  • ২৬১ জন দেখেছেন

মোহাম্মদ আককাস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

দরিদ্র পরিবারের ছেলে আব্দুর রহমান। তার বাবা পেশায় কৃষক। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি। নিজের কিছু জমি চষাবাদ ও কৃষিকাজ করে করে যা আয় করেন তা দিয়ে চলে পাঁচ জনের সংসার। নিয়মিত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা আব্দুর রহমান এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে পরিবারের সবাই খুশি হলেও টাকার অভাবে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া দু:শ্চিন্তায় দিন কাটছে আব্দুর রহমান ও তার পরিবারের।

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর সালামের ছেলে আব্দুর রহমান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাব-মায়ের স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবে। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও কখনো পিছপা হননি বাবা-মায়ের স্বপ্ন থেকে। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন সব অভাব ও কষ্টকে পাড়ি দিয়ে। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

প্রত্যেক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা, স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায়, নিজের মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে এবার ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আব্দুর রহমান। প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে সংসারে আর্থিক টানাপোড়নে ও টাকার অভাবে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দু:শ্চিন্তায় সময় কাটছে পরিবারটির।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমানের বাবা আব্দুর সালাম বলেন, আমার ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

তাই বাসার সবাই খুশি। আল্লাহ্’র কাছে শোকরিয়া আদায় করছি। কিন্তু আমি গরীব মানুষ, সামান্য কিছু জমিতে চাষাবাদ ও কৃষি কাজ করে সংসার এবং ছেলের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছি। এখন ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির জন্য যে পরিমান টাকার প্রয়োজন, তা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করা আমার জন্য খুবই কঠিন। যখনি মনে হচ্ছে টাকার অভাবে ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়াতে পাবরো না, তখনই বুকটা ধড়ফড় করতেছে। তাই আল্লাহ্’র উপর ভরসা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া আব্দুর রহমান বলেন, আমার বাবার তেমন কোন সম্পদ নেই।

দাদার কাছে থেকে দেড় বিঘা মতো জমি পেয়েছেন বাবা। সেই জমিতে চাষাবাদ করে কোন রকমে সংসার এবং আমার পড়াশোনার খচর চালিয়েছেন। আমাকে নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো, পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে করবো। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের মধ্যদিয়ে বাবা মায়ের সেই স্বপ্নের দুয়ার খুললেও টাকার কারনে দু:চিন্তায় পড়তে হয়েছে আমার পরিবারকে। চলতি মাসের ২৭ তারিখ ভর্তির সময় দিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে দু:চিন্তায় আছি। কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভর্তির টাকা আমার পরিবার আমাকে দিবে। এখন ভয় কেবল অভাব, টাকার অভাবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন যেন অসম্পূর্ণ না থেকে যায়।

সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমি এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর আলম বলেন, আব্দুর রহমান একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে এই বিদ্যালয় হতে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে আব্দুর রহমান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার এই কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। আব্দুর রহমান একজন ভালো ডাক্তার হয়ে দেশ ও জাতীর কল্যাণে অবদান রাখবে। আমরও চেষ্টা করবো তার ভর্তির জন্য সেহযোগিতা করতে। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, আব্দুর রহমানের জন্য শুভ কামনা। তার পরিবারকে সম্মান জানাই।

বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তার পরিবার যদি কোনো রকম কোনো সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে, তা যাচাই কওে প্রয়োজনীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com