বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন

সিরাজগঞ্জ ঘুস দিয়েও হয়নি বেতন, শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বজনরা।

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৮৪ জন দেখেছেন

 

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

 

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ঘুসের টাকা ফেরতের দাবিতে রোকেয়া খাতুন নামের এক শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে স্বজনরা। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিক্ষুব্ধ জনতার চাপে গৃহীত ওই ঘুসের টাকা তিনদিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা বিদ্যালয় ত্যাগ করে।

 

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, রোকেয়া খাতুন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভুতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তবে তারা গাড়াবেড় গ্রামে বসবাস করেন। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত পাঠদানও করিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও সভাপতি কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ ঘুস নেন। এ ঘুসের টাকা ফেরতের দাবিতে বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন পরিবার। পরে সভাপতি চার লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করলে মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তারা।

নিহতের পরিবার জানায়, ওই ঘুসের টাকার শোকে গত ৩০ জানুয়ারি রোকেয়া স্ট্রোক করেন। পরে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে তার মৃত্যু হয়।

 

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, ১৯৯৮ সালে ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৬ নভেম্বর ইংরেজি বিষয়েসহ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন রোকেয়া খাতুন।

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন, আমি নিজেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলাম। তখন বিদ্যালয়ের ঘর দেওয়ার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল প্রধান শিক্ষক। এরপর আমি সেখান থেকে সরে আসলেও আমার স্ত্রী ঠিকই নিয়মিত পাঠদান করাতেন। তবে প্রতিষ্ঠান এমপিও হলেও আমার স্ত্রীর বেতন করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় চার লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বেতন হয়নি। সর্বশেষ বেতন করে দেওয়ার কথা বলে ২০২২ সালে দুই লাখ টাকা চায়। পরে সভাপতির হাতে আরও দেড় লাখ টাকা দেই। এভাবে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা নিয়েছে তারা। এ টাকার শোকেই আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম এ ঘুস নেওয়ার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর উঠিয়েছিলাম। আর কিছু বেতন করে দেওয়ার জন্য নিয়েছিলাম। তবে আমরা কথা দিয়েছি তিনদিনের মধ্যে তাদের চার লাখ টাকা ফেরত দিবো।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, তার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও বেতন করে দেওয়ার কথা বলে যে টাকা নেওয়া হয়েছিল। সেটি ফেরত দেওয়া হবে।

 

এ প্রসঙ্গে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে পরিবার। এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে গেলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তবে মৃত ওই শিক্ষিকার নিয়োগের কোনো কাগজপত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেখাতে পারেনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com