মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

মাটিখেকোদের তান্ডবে পুকুরের কাদামাটিতে সয়লাব নওগাঁর রাস্তাঘাট

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৯২ জন দেখেছেন

 

মোহাম্মদ আককাস আলীঃ

মাটিখেকোদের তান্ডবে পুকুরের কাদামাটিতে সয়লাব নওগাঁর রাস্তাঘাট। অতিষ্ঠ সর্বস্তরের মানুষ। পুরো জেলাজুড়ে এখন চলছে অবৈধ পুকুর খননের মহাউৎসব। পুকুরের কাদামাটি খোলা ট্রাক্টরে ভরে প্রকাশ্য দিবালোকে উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়কের উপর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় কাদামাটি পাকা রাস্তার উপর পড়ে পুরো রাস্তা মাটিতে ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলে সেসব মাটি ভিজে রাস্তা কাদামাটিতে সয়লাব হয়ে যায়। ফলে সকল প্রকার যানবাহন ও মানুষের চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। অনেক জায়গাতেই যানবাহন কাদামাটিতে পিছলে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়। প্রশাসন এসব মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নিলেও তাদের তান্ডব থামানো যাচ্ছেনা। অভিযোগ করা হয়েছে যে, একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী বিভিন্ন প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে অধিক লাভের লোভ দেখিয়ে তিনফসলী ধানী জমিতে পুকুর খননে উৎসাহী করছে। তারা ফসলী জমির মাটি অবৈধ খননযন্ত্র ভ্যেকু মেশিন দিয়ে কেটে সে মাটি কিনে নিয়ে বিভিন্ন ইটভাঁটায় বিক্রি করছে। এ ছাড়া কেউ কেউ প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ভরাট পুকুর পূণ:খনন করছে। এসব পুকুরের কাদামাটি খোলা ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৫২ সালের ‘দ্য বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এ্যাক্ট’ এর ৩ ধারা অনুসারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোন পুকুর খনন বা পূণ:খনন করা যাবে না। বিদ্যমান আইনটির প্রয়োগ না করায় বিভিন্ন স্থানে চলছে একের পর এক পুকুর পূণ:খনন। ১৯৮২ সালের ইজমেন্ট রাইটস এক্টে পথাধিকার নামে একটি বিশেষ আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনেরও বাস্তবায়নও নেই। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন-২০১৬-এর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে ‘বাংলাদেশের যে সকল কৃষিজমি রয়েছে, তা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করতে হবে এবং কোনোভাবেই তার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে এবং এ উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধি মোতাবেক অত্র বিধানাবলি পরিবর্তন করা যাবে। প্রশাসন এই আইনের আওতায় বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেছে। কিন্তু জরিমানার পরও সেসব ফসলী জমিতে আবার পুকুর খনন সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নে একটি পুকুরের পাড় ভ্যেকু মেশিন দিয়ে খনন করে সে মাটি অন্যত্র নিয়ে যাবার সময় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ওই ভ্যেকু মেশিনের চাবি খুলে নিয়ে আসার পর আবার ফেরৎ দেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলে ওই পুকুর খনন বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার তা খনন সম্পন্ন করা হয়। এই ইউনিয়নে অপর একটি পুকুর খননের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চাঁন্দাশ ইউনিয়নে একটি পুকুরের পাড় খননের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেটির খনন আবার সম্পন্ন করা হয়। রাইগাঁ ইউনিয়নে একটি পুকুর খননের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু এতোকিছুর পরও থামছেনা ফসলী জমিতে পুকুর খনন। একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একের পর এক পুকুর খনন করে চলেছেন। জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আরা জানান, রাস্তার উপর মাটি পড়ে কাদামাটিতে সয়লাব হয়ে যাবার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে অফিসের লোক পাঠিয়ে একটি পুকুরের পাশের রাস্তার উপর থেকে সব মাটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারাসন মোড় থেকে রাইগাঁ ইউনিয়নের হরিপুর নামক স্থান পর্যন্ত পাকা সড়কের উপরে পড়ে থাকা কাদামাটি তুলে ফেলা হচ্ছে। অন্যান্য স্থানের মাটিও সরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। রিফাত আরা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফসলী জমিতে পুকুর খননের খবর পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে জনবল কম হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে শুধুমাত্র রাতের বেলায় পুকুর খনন করছে। আর পুকুর পূণ:খনন সংক্রান্ত বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটাও বাস্তবায়ন করা হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com