শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অটোরিকশা চালকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

ইব্রাহিম আলম সবুজ রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ১২৩ জন দেখেছেন

ইব্রাহিম আলম সবুজ রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক অটোরিকশা চালকের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যাকারীদের চিহ্নিতসহ হত্যার কারণ উদঘাটন করেছে পুলিশ। নতুন অটোরিকশা কেনার টাকা ছিনিয়ে নিতেই নিহতের ভাতিজার সহযোগিতায় পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় নিহত অটোরিকশা চালকেরো ভাতিজা রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী ফেরদৌস ওরফে গমকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ফেরদৌস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপর আসামি রফিকুলকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উলিপুর থানা পুলিশের এসআই মো. শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতার ভাতিজা রফিকুল ইসলাম উপজেলার ধরনীবাড়ী কানিপাড়া গ্রামের আলিফ উদ্দিনের ছেলে এবং ফেরদৌস ওরফে গম ধরনীবাড়ী তেলিপাড়া গ্রামের মৃত দছিম উদ্দিনের ছেলে। নিহত অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম তেলিপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তার ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে ভাতিজা রফিকুলের সঙ্গে নিহতের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গিয়েছিল বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। গ্রেফতার রফিকুল গরুর ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলাও রয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের একটি কাঁচা সড়কের পাশের বাঁশঝাড় থেকে রফিকুলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন রাতে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে উলিপুর থানায় মামলা করেন।

এদিকে, লাশ উদ্ধারের পরপরই ঘটনা তদন্তে পুলিশসহ সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে নামে। দিনভর অভিযান ও তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন ও জড়িত সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে পুলিশ। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের ভাতিজা রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী ফেরদৌসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মূলত পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকুলের নতুন অটোরিকশা কেনার লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নিতে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতের সঙ্গে রফিকুলের বন্ধুত্ব ও মেলামেশার কারণে টাকার ব্যবস্থা হওয়ার খবর তার কাছে ছিল। এজন্য বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অটোরিকশাচালক রফিকুলকে নতুন রিকশার খোঁজ পাওয়ার কথা বলে কৌশলে উপজেলার মাঝবিল বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তার সহযোগীরাসহ রফিকুলকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে অটোরিকশাচালক রফিকুল ঘটনা প্রকাশ করতে পারে, এই আশঙ্কায় গলা কেটে হত্যা করে ভাতিজা রফিকুল, ফেরদৌস ও তাদের সহযোগীরা।

আসামীদের স্বীকারোক্তির বরাতে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আসামি ফেরদৌস নিজ হাতে চাকু দিয়ে রফিকুলের গলা কাটার কথা স্বীকার করেছে। তাকে সহযোগিতা করেছে ভাতিজা রফিকুল ও তাদের অন্য সহযোগীরা। তাদের সঙ্গে আরও একাধিক সহযোগী ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

 

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের দুজনকে গ্রেফতার
তৎসংগে হত্যার ব্যবহৃত ছুরি-চাকু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে আসামিরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জড়িত অপর আসামিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে আসামি রফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আদালত আসামি রফিকুলকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উলিপুর থানা পুলিশের এসআই মো. শাহ আলম বলেন, আসামি ফেরদৌস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রফিকুলকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com