শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

হ্যালো উত্তর বঙ্গের জেনারেল আব্দুল জলিল

এম মতিউর রহমান মামুন
  • আপডেট সময় : সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩
  • ৮৭৪ জন দেখেছেন

এম মতিউর রহমান মামুন

 

মধ্যেদিনে আধোঘুমে, আধো জাগরণে/ বোধকরি স্বপ্নে দেখেছিনু আমার সত্তার আবরণ / খসে পড়ে গেল আজানা নদীর স্রোতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবিনাসী কবিতার সংসয়টাই  প্রাকাশ করেছিলেন আওয়া লীগের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল জলিল। তাঁর অবর্তানে প্রিয় নওগাঁর আওয়ামী লীগের আবস্থা কি হবে? তাঁর সমস্ত জীবনে মেধা মননে প্রিয় সংগঠণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যে  সৃষ্টি করেছেন  তা কি মুছে যাবে? নওগাঁ বাসী  কি তাঁর সৃষ্টিকর্ম লালন করতে পারবে । পতিসর বাংলোতে মৃত্যুর কিছুদিন আগে এমন সংসয়ই প্রকাশ করেছিলেন জননেতা আব্দুল জলিল । আমি তখন তার পাশেই দাঁড়িয়ে   কথা শ্রবণ করছিলাম। তাঁর স্বপ্নছিলো প্রিয় পুত্র নিজান উদ্দীন জলিল জন ব্যারিস্টারি শেষ করার পর তাঁর জীবদ্দশায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনিতীতে হাল ধরাবেন, কিন্তু শে সময় পান নি তিনি। অবশ্য বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁকে নমিনেশন দিয়েছিলেন।

 

বঙ্গবন্ধুর সহচর জননেতা আব্দুল জলিল

৭০- এর সাধারণ নির্বাচনের কিছু পূর্বে  ৬৯ শেষের দিকে ব্যরিস্টারি পড়তে লন্ডনে আবস্থান করছিলেন। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু তখন তাঁর সকল প্রিয় সহচর কে একত্র করার লক্ষে  আব্দুল জলিল সাহেব কে টেলিফোনে বলেছিলেন ” হ্যালো উত্তর বঙ্গের জেনারেল আব্দুল জলিল”, আমাদের কে নির্বাচনে জিততে হবে, সারা বাংলায় নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে, নৌকার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে। পূর্ব বাংলার সব গুলো আসনে নৌকা মার্কাকে জিতাতে হবে। তুমি দ্রত দেশে ফিরে এসো, দেশ মাত্রিকা নিয়ে কাজ করার উপযুক্ত সময় এখন আমাদের হাতে। দেশের মানুষকে যদি বাঁচাতে না পারি কি হবে তোমার ব্যারিস্টারি পড়ে” ? বঙ্গবন্ধুর এমন ফোন পেয়ে জননেতা আব্দুল জলিল দেশে ফিরে আসেন। মাত্র দু’মাস বাঁকি ছিল তাঁর ব্যারিস্টার হতে। দেশে ফিরে তিনি বর্ষামাসে ডিঙি নৌকাতে মাইক নিয়ে ভেসে ভেসে বঙ্গবন্ধুর নৌকার পক্ষে ভোট প্রর্থনা করেন। ঐ নৌকাতে জলিল সাহেবের সঙ্গে আমার স্বর্গীয় পিতা হাফিজার রহমান প্রচারে ছিলেন তাঁর কাছেই কথাগুলো শুনেছি। সেই সময় আমার পিতা নিজ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই শত টাকা বিঘা দরে জমি বেঁচে দলের কাজে ব্যায় করেছন। আমরা নওগাঁর মানুষ, জলিল সাহেব আমাদের রাজনৈতীক দেবতা, গুরু , মহাগুরু তা অশীকার করার  পথ নেই। আমি মুক্তি যুদ্ধ দেখিনি তাঁর বিশাল ভুুমিকার কথা পড়েছি। শুনেছি যুদ্ধের পর বিশাল অংকের টাকা দেশের কথা চিন্তা করে ব্যাংকে ফেরত দিয়েছিলেন তিনি । বাংদেশ আওয়ামী লীগে বলিষ্ঠ নেত্রীত্ব দেখেছি, লাগি- বৈঠা আন্দোলনের তাঁর সিংহগর্জন এখন আমার কানে ভাসে। তাঁর বর্নাঢ কর্মময় জীবন আমাদের ইতিহাস।

ছাত্রজীবনেই তিনি তৎকালীন বিভিন্ন আন্দোলন অংশগ্রহণ ও বিরত্বের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। তাঁর অন্যতম পরিচয় ছিল ‘নওগাঁর সাধারণ মানুষের ‘জলিল’ হিসাবে। আব্দুল জলিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নং সেক্টরের প্রধান সংগঠক ও যুদ্ধে বিরত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তা আমাদের আশির্বাদি দলিল। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে তিনি নওগাঁ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই নওগাঁর আশির্বাদি সন্তান। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, বাকশাল গঠিত হলে জাতির পিতা তাঁকে নওগাঁর গভর্নরের দায়িত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর তিনি গ্রফতার হন। প্রায় ৪ বছর পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৮১ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েই আওয়ামী লীগ পার্টিকে সু-সংগঠিত করার কাজে নিজকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮২ সালে সামরিক শ্বাসন জারি হলে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৩ সালে দলের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধরন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় । ১৯৮৪ এবং ১৯৮৮ সালে তিনি পরপর দু’বার নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই গণমানুষের নেতা। ১৯৮৬ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত নওগাঁ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০’র দশকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আওয়ামী লীগেন বর্ষীয়াণ নেতা আবদুল জলিল।

তখন থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমরা শুনেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই গুণী নেতা ।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বৃদ্ধ বয়সে আবাও গ্রেপ্তার হন তিনি।

দলের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া এই নেতা ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের চরম দুঃশাসনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করেন। দলের কেন্দ্রীয় অফিসে সকাল-বিকাল বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করেন। সারা দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। দলের ছোট-বড় সকল পর্যায়ের কর্মীদের ছিলেন পরমাত্মিয়।

মানবতার পূজারি আঃ জলিল খুবই দয়ালু মানুষ ছিলেন। একজন জনদরদি জাতীয় নেতার যতগুলো গুণ থাকা দরকার, এর প্রায় সবই এ নেতার মধ্যে ছিল। তৃণমূল থেকে উঠে এসে তিনি জাতীয় নেতা হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, সৎ, অমায়িক, পরিশ্রমী, নির্লোভ, নীতিমান, ধৈর্যশীল, ভদ্র, বিনয়ী, নিরহংকারী, সাহসী, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন বর্নাঢ়্য রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন আজীবন। যাহোক আমি রাষ্ট্রীয় পলিটিকস্ বুঝিনা, যতটুকু বুঝি তাঁর বাণী সত্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ্য প্রতিষ্ঠা হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

 

লেখক রবীন্দ্রস্মৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com