ডাঃ আব্দুল মতিন
সহকারী মেডিকেল অফিসার –
আরগন ফার্মাসিউটিক্যালস( আয়ু).
(এক্স) উপ- সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার-
বারিধারা জেনারেল হসপিটাল লিঃ.

হাই ব্লাড প্রেশারকে হাইপারটেনশনও বলা হয়। এই কন্ডিশন তখনি সৃষ্টি হয় যখন আর্টারিতে রক্তের অনেক প্রেশার থাকে। একজন ব্যক্তির ব্লাড প্রেশার রিডিং যখন ১৪০/৯০ mm Hg বা এর চেয়েও বেশি হয় তখন বলা হয় হাইপারটেনশন। একে “সাইলেন্ট কিলারও” বলা হয়ে থাকে। কেননা যদি সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এমনকি কিডনি ফেইলিওর-ও হতে পারে কিন্তু লক্ষণীয় কোন সিম্পটম্প দেখা যাবে না। বর্তমানে এমন কোন একটি বাসা পাওয়া যাবে না যেখানে কোন একজন হাইপারটেনশনের রোগী নেই। প্রেশার হুটহাট বেড়ে যেতে পারে।

সবার লক্ষণ এক না তবুও কমন কিছু লক্ষণগুলো হলঃ
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা,
ঘাড় ব্যথা করা,
বমি বমি ভাব হওয়া এমনকি বমি হয়ে যাওয়া।
আর খুব বেশি হলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

যদিও ডাক্তার বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তবুও খুব সিম্পল কিছু ন্যাচারাল উপাদান দ্বারা হাই ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল করতে পারেন। এইসব উপাদানগুলো কিচেন ইনগ্রেডিয়েন্স নামে পরিচিত, কেননা এসব উপাদান আমরা আমাদের কিচেন কেবিনেটেই পেয়ে থাকি।

হাই ব্লাড প্রেশারের কিছু কমন কারণগুলো হলঃ
০১. প্রতিদিন ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া।
০২. অ্যালকোহল গ্রহণ করা।
০৩. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য /পানীয় থাকা।
০৪. নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে না তোলা।
০৫. মেন্টাল স্ট্রেস।
০৬. অবেসিটি, যেহেতু হার্টকে অতিরিক্ত ব্লাড পাম্প করা লাগে।
০৭. বংশগত ভাবেও অনেকেই হাই ব্লাড প্রেশারের শিকার হয়ে থাকে।

কোন উপাদান কীভাবে ব্যবহার করবেন হাইপারটেনশন মোকাবেলা করার জন্যঃ

কলাঃ কলা এমন একটি ফল যা ব্লাড প্রেশারের রোগীরা প্রেশার কন্ট্রোল করার জন্য প্রতিদিন খেতে পারেন। কলাতে থাকা পটাসিয়াম যা প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একই সাথে কলাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম উপরন্তু কোলেস্টেরল ফ্রি। হাইপারটেনশনের পাঠকেরা আপনারা প্রতিদিন একটি করে কলা খেতে পারেন।

রসুনঃ রসুন প্রেশারের রোগীদের জন্য ওষুধ স্বরূপ কাজ করে, কারণ এটি প্রাকৃতিক ভাবেই কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় তাই প্রেশারও কমে যায়। চিবানো রসুন হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি করে, যা ব্লাড ফ্লো সঠিক রাখে, গ্যাস দূর করে এবং হার্টের উপর থেকে প্রেশার কমিয়ে আনে। প্রতিদিন রান্না অথবা কাঁচা এক কোয়া রসুন আপনার জন্য যথেষ্ট।

কাঁচা বাদামঃ কাঁচা বাদাম মানে যে বাদামটি বালুতে ভাঁজা হয়নি। প্রতিদিন ৪-৫ টি কাঁচা বাদাম আপনাকে রাখবে প্রেশার থেকে কয়েকশ হাত দূরে। কাঁচা বাদামে আছে mono-saturated ফ্যাট। প্রমাণিত হয়েছে এই ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে সেই সঙ্গে arterial inflammation ও কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে আপনি থাকেন লোয়ার ব্লাড প্রেসার লেভেলের আওতায়।

ডাবের পানিঃ ডাবের পানিতে আছে পটাশিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইট এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েণ্ট। যা কিনা হাই- ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

হলুদঃ অনেকেই হয়ত জানি না এর আরেক নাম কারকিউমিন। এর অনেক গুলো গুণের মধ্যে একটি হল এটি সারা শরীরের ইনফ্লামেসন দূর করে। ইনফ্লামাসনের প্রাথমিক কারণ হিসেবে হাই কোলেস্টেরল এমনকি হাই ব্লাড প্রেশারকে দায়ি করা হয়। হলুদ ব্লাড ভেসেল শিথিল করে। এটি ব্লাড থিনার-ও, যা হাইপারটেনশনের সাথে ফাইট করার আরেকটি শক্তিশালী হার্বস।

কালোজিরাঃ কালজিরার তেলে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো কোলেস্টেরল আর ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিদিন এক চা চামচ করে কালোজিরার তেল খান। যদি এই তেল খেতে আপনার খারাপ লাগে তাহলে জুস অথবা চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

লেবুর রসঃ হাইপারটেনশনের কন্ট্রোলের জন্য নিয়মিত লেবুর রস পানের অভ্যাস করুন। লেবু ব্লাড ভেসেল নরম করে এবং তাদের রিজিডিটি দূর করে। ফলে হাই ব্লাড প্রেশার কমে যায়। উপরন্তু লেবুতে থাকা ভিটামিন বি এর জন্য হার্ট ফেলুয়ার এর চান্স কমে যায়। যাদের হাই ব্লাড প্রেশার আছে তারা দিনে কয়েকবার লেবুর পানি পান করবেন।

পেঁয়াজের রসঃ প্রতিদিন একটি মাঝারি সাইজের কাঁচা পেঁয়াজ খান। এটি নার্ভাস সিস্টেমের জন্য টনিকের মত কাজ করে। এটি রক্ত পরিষ্কার করে, হার্টের কার্যকারিতা রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে প্রেশার কমিয়ে দেয়।

তেতুলঃ আংশিক পরিমাণে তেঁতুল ও প্রেশার কমাতে সাহায্য করে, তবে পরিমাণ হতে হবে অনেক কম।

‌‌> এছাড়া বলা যায় নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ, স্বাভাবিক ঘুম, মানসিক চাপ মুক্ত থাকা, পাতে অতিরিক্ত লবন গ্রহণ না করা, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা, কোমল পানীয় কম পান করা, এবং শারীরিক ভাবে অ্যাক্টিভলি কাজ করা যেমনঃ লিফট কম ব্যবহার করা ও সিড়ি ব্যবহার করা, দৈনিক হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা ইত্যাদি। এক কথায় বললে লাইফস্টাইল মডিফিকাশনের মাধ্যমে জীবন ধারণ এর কিছু ইতবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।

তবে অতিরিক্ত প্রেশার এর তারতম্য দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে বা চিকিৎসক যেভাবে পরামর্শ দেন তা মেনে চলতে হবে, তাহলেই হাইপারটেনশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।