মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

সিরাজগঞ্জ যমুনার তীর রক্ষা বাঁধ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনায়েতপুরের দক্ষিণে যমুনার ভাঙনে বিলীন

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন,সলঙ্গা সিরাজগঞ্জে প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৪ জন দেখেছেন

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন,সলঙ্গা সিরাজগঞ্জে প্রতিনিধি

সাড়ে ছয়শ কোটি টাকার স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনায়েতপুরের দক্ষিণে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। দৈনিক বাংলাগোলাম মোস্তফা রুবেল, সিরাজগঞ্জ উজানের ঢল আর বন্যার পানিতে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে বছর বছর ভাঙনে ভিটেমাটি হারাতে হয় শত শত পরিবারকে। রাস্তাঘাট, বাজারসহ স্থাপনাগুলো প্রতিবছরই থাকে হুমকির মুখে।

এই কয়েকটি উপজেলার বাসিন্দাদের নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত মার্চে শুরু হয় এর কাজ। জুনে বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়তে থাকলে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যমুনার পানি কমে গেলেও বাঁধ নির্মাণের কাজ আর শুরু হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কাজ শুরু করা যায়নি। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ তৈরির প্রকল্পটি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন পায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ১৭টি প্যাকেজের আওতায় গত মার্চে শুরু হয় কাজ। এর মধ্যে যমুনায় পানি বাড়তে থাকলে গত জুনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে বন্যার সতর্কবার্তা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে নদীর চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। চলতি বছরে যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বাড়ার সঙ্গে জেলার বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলার দক্ষিণে নদীভাঙন তীব্র আকার নেয়। প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর, ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। বিশেষ করে এনায়েতপুর থানার জালালপুর ও আড়কান্দিতে ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি দেখা দেয়। এর মধ্যে জালালপুর আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের বেশ কয়েকটি ঘর ডুবে যায় যমুনা নদীতে। সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু না করার কারণেই নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

জালালপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে আমাদের দাবি দীর্ঘ দিনের। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। কিন্তু কাজ শুরুর পর মাঝপথে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে।’

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন হয়েছে জালালপুর এলাকায়। গুচ্ছগ্রামসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। ভাঙন রোধে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, ‘যমুনায় পানি বাড়লে জুন থেকে কাজ বন্ধ আছে। কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নদীতে ড্রেজিং করে তীরে মাটি ফেলা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লক নির্মাণ কাজও শুরু হবে। আশা করছি, চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’

জানতে চাইলে যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল বলে জানান ১১ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর সি কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাঁধের কাজ শুরু করতে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কাজের জন্য এরই মধ্যে জমি নেয়া হয়েছে। পাথর নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। পাথরের দাম বেড়েছে। সেই ঝামেলা মিটেছে। নদীতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। পাথর এলে ব্লক তৈরি করে নদীর তীরে বসানো হবে।’

জানতে চাইলে এনায়েতপুরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বেলকুচি-চৌহালী অঞ্চল) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিলটন হোসেন বলেন, স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কাজ শুরু করেনি। তবে তারা যেন দ্রুত কাজ শুরু করে, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com