নিজস্ব প্রতিবেদক :
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার (২২মার্চ) বেলা ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে আটকের পর শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের ভাষ্য, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।
নিহত সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) বলেন, আমার ভাগনি বুধবার সকালে অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোতে র্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কোন র্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হলো এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর লাগাতে থাকি।
এরপর দুপুর ১২টার পর জানতে পারি, সুলতানা নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখি র্যাবের লোকজন সেখানে। ভাগনি কোনো কথাবার্তা বলতে পারছে না। এরপর কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৪মার্চ) সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এদিন সকালে মৃত্যু হলেও মরদেহ দেওয়া হয় শনিবার দুপুরের পর।
তিনি আরো বলেন, সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর সে তার এক সন্তানকে অত্যন্ত কষ্ট করে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করে আসছিলো। শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে। সে ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তার বিরদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি।
সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত বলেন, আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী র্যাব-৫ এর কোম্পানী কম্পানি কমান্ডার সিপিএসসি মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে পাওয়া আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাই। তার ব্যাংক হিসেবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা তার সত্যতা পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।
আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা তাকে রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ নেন। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়।
সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আটকের পর ওই নারীকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর পুর্ব সময় পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিল। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সঠিক নয়।