বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

রাজারহাটে চাঁন্দামারী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষকের বেতন বন্ধ হওয়ায় ৮জনের বিরুদ্ধে মামলা

ইব্রাহিম আলম সবুজ রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩
  • ১৭৭ জন দেখেছেন

ইব্রাহিম আলম সবুজ রাজারহাট কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

রাজারহাটে শিক্ষকের বেতন বন্ধ হওয়ায় অধ্যক্ষসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মামলা।
কুড়িগ্রামঃ পিতা মাদারাসার অধ্যক্ষ থাকাকালীন ভূয়া নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে ও এনটিআরসির জাল সার্টিফিকিটে সহকারি মৌলভী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন পুত্র আশিকুর রহমানকে। সেই নিয়োগে এমপিও ভূক্ত হয়ে ৭বছর ধরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন তিনি। বিষয়টি ধরা পড়ার পর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে গত ৬মাস পূর্বে তার বেতন বন্ধ হয়। একারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ভূয়া শিক্ষক মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,মাদরাসার সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক,জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ ৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি সাজানো মামলা দায়ের করেন। এরপর এনটিআরসির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পাল্টা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই ভূয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ প্রদান করেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে। অন্যথায় মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজারহাট উপজেলার চাঁন্দামারী ফাজিল মাদরাসায়।

অভিযোগে জানা গেছে,২০১৪সনের ২৪ডিসেম্বর উপজেলার চাঁন্দামারী ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং আরবী প্রভাষকের শুন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম শেষে সাবেক মাদরাসা অধ্যক্ষ এবং নিয়োগ কমিটির কতিপয় সদস্য যোগসাজস করে জালিয়াতির মাধ্যমে ওই নিয়োগ রেজুলেশনের নীচের অংশে সহকারী মৌলভী শিক্ষক,এবতেদায়ী প্রধান,অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং এমএলএসএস পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে অতিরিক্ত ৪জনের নাম রেজুলেশনে অন্তর্ভূক্ত করেন। এরমধ্যে জাল নিবন্ধন সার্টিফিকেটে ভূয়া নিয়োগে মৌলভি শিক্ষক বনে যান সাবেক অধ্যক্ষের পুত্র আশিকুর রহমান। ২০১৫সনের জানুয়ারী মাসে যথারীতি তিনি এমপিওভূক্ত হন।

পরে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম অবসরে যাওয়ার পর ২০১৭ইং সনের নভেম্বরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিকের তদন্তে জাল নিবন্ধন সার্টিফিকেটে চাকুরীর সত্যতা পাওয়ায় সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মোসলেম উদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ পাঠান। এরপ্রেক্ষিতে ২০১৭সনের ১জানুয়ারী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বিশেষ) মোহছেনা বেগম স্বাক্ষরীত এক শোকজ পত্রে জাল সনদে এমপিও ভূক্ত হওয়ায় কেন বেতন-ভাতা বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না জানতে চাওয়া হলেও অজ্ঞাত কারনে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।

এনিয়ে গত বছর পূণঃরায় মোকলেছুর রহমান নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদারাসা কর্তৃপক্ষকে ওই মৌলভী শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধের নির্দেশ প্রদান করলে তার বেতন ভাতা বন্ধ করা হয়। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে ভূয়া শিক্ষক সত্য ঘটনা গোপন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক এক লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবির অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহ ৮জনের বিরুদ্ধে একটি সাজানো ও হয়রানী মূলক মামলা দায়ের করেন। পরে এনটিআরসির রিপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র থেকে জাল সার্টিফিকেটে ভূয়া নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভূয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে মামলা করার নির্দেশ দেন।

অভিযোগকারী মোকলেছুর রহমান বলেন, আমাকেও ওই ভূয়া নিয়োগ রেজুলেশনের মাধ্যমে এবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে আমি যোগদানের ১০/১৫দিনের মধ্যে নিয়োগ জালিয়াতি ও অপরাধের বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি। অথচ মৌলভি শিক্ষক ও অফিস সহকারি জাল নিয়োগ ও জাল সনদে এখনো বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সহকারি মৌলভী শিক্ষক আশিকুর রহমান বলেন,আমি আদালতে মামলা করেছি,আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নিব।

মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুব ছাফালাইন মোঃ আখতার আহসান মৌলভী শিক্ষকের এনটিআরসির সার্টিফিকেট জাল এবং অফিস সহকারি সহ তার নিয়োগটি ভূয়া বলে সত্যতা স্বীকার করেন, এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, জাল নিবন্ধন সনদে চাকুরীর কারণে মৌলভী শিক্ষক আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। অফিস সহকারির ভূয়া নিয়োগের অভিযোগটিও মাদারসার সভাপতি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহোদয়কে খতিয়ে দেখার জন্য বলেছি।

মাদরাসার এডহক কমিটির সভাপতি ও কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমাকেও মামলার বিবাদী করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট ওই ব্যক্তি আবারও ১টি সনদ দিয়েছে ঢাকায় যাচাইয়ের পর দেখা যায় সেটিও জাল,পরে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাদরাসার অধ্যক্ষকে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com