নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগর ট্রাফিকে এখন ডিজিটাল অনিয়ম ও ব্যাপক ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
সার্জেন্টরা আছে ক্যাশিয়ারের ভূমিকায়, মামলা নয়, ব্যতিব্যস্ত নিজেদের পকেট ভরায়।ট্রাফিকে যতই আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, ততই অনিয়মের মাত্রা হয় ভিন্ন।যখন যে, টিআই ওয়ানের দ্বায়িত্ব পান, তখন তার পোয়াবারো।
টিআই ওয়ানের (এডমিন) মাসিক নিজস্ব আয় ১০ লাখ টাকা, সাথে উদ্ধর্তন কর্তাদের কমিশন।ফলে লোভনীয় পদে বসতে চলে বড় রকমের দেনদরবারও।প্রত্যেক এডমিন নিজস্ব পছন্দের মানুষ দিয়ে চালায় তাদের অনিয়ম দুর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্য।নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত না হলেও নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত সময় পার করেন ট্রাফিকের একটি সিন্ডিকেট।
গাড়ি মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ শহরে চলাচলকৃত সকল প্রকার যানবাহন থেকে উঠানো হচ্ছে মাসোহারা।নগরীর ট্রাফিক বিভাগ গাড়ি মালিক ও শ্রমিকদের ব্যাপক হয়রানির ফলে হয়রানি ও জরিমানার ভয়ে নিজ থেকেই যোগাযোগ করেন ট্রাফিক অফিসের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত দূর্নীতিবাজ কর্তা ব্যক্তিদের সাথে।
মাসিক মাসোহারা’র স্লিপ বানিজ্য এখন রমরমা।সাথে আছে ভুয়া কেস স্লিপও।
বর্তমান টিআই ওয়ানের দ্বায়িত্বে আছেন প্রবীণ কুমার পাল।মুলহোতা অঘোষিত ক্যাশিয়ারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন পরিদর্শক আলিম সরকার।যোগদানের ১০ দিনের মাথায় বালু মহলের ট্রাক মালিক, বাস সমিতি, সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রান্সপোর্টসহ নগরীতে চলাচলকৃত সকল যানবাহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
সচেতন নগরবাসী বলছেন, মাসোয়ারার কারণে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলাচল করায় সড়কে বাড়ছে দূর্ঘটনা, প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি।অনুমোদনহীন গাড়ির ছড়াছড়ি এখন নগরজুড়ে কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ পড়ে আছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার পিছনে।জনসাধারণ ও সরকারকে দেখানোর জন্য কিছু মামলা দিয়ে রাজস্ব আয় দেখানো হলেও ব্যস্ত আছেন মাসিক মাসোহারা নিয়ে।
মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অঘোষিত ক্যাশিয়ারের অন্যান্য দ্বায়িত্বে আছেন কনস্টেবল সাদ্দাম, মাহাবুব হাসান, আজাহার।এদের প্রধান মুলহোতা পরিদর্শক আলিম সরকার।
অপরদিকে টিআই-১ এর অঘোষিত ক্যাশিয়ার আরো একজন পাবলিক বিভিন্ন স্থান থেকে মাসিক মাসোহারা নেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসদ্ধানে জানা যায়, সিএনজি, ট্রাক, বাস, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন নগরীর ট্রাফিক বিভাগ।মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা মাসিক চাঁদা উঠানো হয় বিভিন্ন খাত থেকে।
এদিকে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার, দিনের বেলায় নগরীতে চলাচল করা ইট-বালু বহনকারী ট্রাক মালিকদের নিকট থেকেও নেওয়া হয় মাসিক চাঁদা।শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও অটোরিকশায় মাসিক চাঁদা আদায় করেন ৩ লাখ টাকা।যা ভাগ বাটোয়ারা হয় অফিসের প্রসিকিউশন সেকশনসহ অন্যান্য দপ্তরে।
প্রতিটি অটোরিকশা থেকে মাসিক নেওয়া হয় ৩ শত টাকা।নগরী চলাচলকারী অবৈধ ভুটভুটি, নছিমন করিমন আটক করে আদায় করা টাকা অফিসের কর্মরত কনস্টেবল সাদ্দাম ও আজাহারসহ অন্যান্যরা ভাগ করে নেন।
এছাড়াও অফিসে বেলাল, মাহমুদ হাসান নামে এক কনস্টেবল প্রতিনিয়ত আটক ট্রাক, বাস, সিএনজি সহ বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহনে দেনদরবার করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেন।আর এদের দেনদরবারে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউশন শাখার সার্জেন্ট নুরে আলম সিদ্দিক।
তবে ট্রাফিক বিভাগে নতুন নিয়মে সরাসরি টাকা জমা দেওয়া হয় ব্যাংকে।এতে কিছুটা অনিয়ম বন্ধ হলেও নকল কেস স্লিপে চলে বানিজ্য।এখনো ডিজিটাল মেশিনে মামলা না নিয়ে মেন্যুয়ালি নকল বা জব্দ তালিকা মুলে গাড়ি ধরা হয়।অনেক সময় নকল (বৈধ নয় এমন) কেস স্লিপ ব্যবহার করা হচ্ছে।গাড়ি জব্দের কেস স্লিপের অপব্যবহার বেশি করা হচ্ছে।
আরএমপি ট্রাফিক বিভাগে দীর্ঘদিন যাবৎ উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন অনির্বাণ চাকমা।ট্রাফিকের ডিসি মাসোহারার একটা বড় অংশ পায় বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিভাগের কয়েকজন।৫ বছর ধরে তিনি এই বিভাগের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।তার নির্দেশ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগে কারো কিছু করার থাকেনা।সরকারি নাম্বারে তার ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও এখন পুরোনো।
সচেতন মহলের ব্যক্তিরা বলছেন, নগরীতে থেমে নেই ফিটনেসবিহীন ভারী গাড়ির মাসিক চাঁদা।বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ী এখন চলাচল করে শুধুমাত্র মাসিক চাঁদায়।
আরো জানা যায়, রাজশাহীর বাহিরে থেকে আসা ট্রাক আটক করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।অন্যথায় চলে হয়রানি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাইসমিলের ট্রাক মালিকদের নিকট থেকে নেওয়া হয় মাসিক মাসোহারা।এই মাসিক মাসোহারা উত্তোলনের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত সার্জেন্ট শহিদ।
এছাড়াও ড্রাম ট্রাকের দ্বায়িত্বে আছেন সার্জেন্ট সাদ্দাম। টান্সপোর্ট থেকে মাসোহারা নেওয়ার দ্বায়িত্বে আছেন নওশাদ।
এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন পরিবহন থেকে মাসিক মাসোহারা উত্তোলন করেন সার্জেন্ট সাবিহা, সাধন, ইমরান, মনিরসহ অনেকেই।
রাজশাহীতে অবস্থিত প্রতিটি মাইক্রোবাস থেকে নেওয়া হয় মাসোহারা।ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার, হাইস, মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে নেওয়া হয় মাসোহারা।
এ বিষয়ে কথা বলতে টি আই (ওয়ান) প্রবীণ কুমার পাল বলেন, একমাসের জন্য দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে।এ সময়ের মধ্যে শহর চিনতেই লেগে যাবে।ভালো কাজ করতে চাই আমি।এখন ট্রাফিক বিভাগ চলে আমাদের ডিসি স্যারের তত্ত্বাবধানে।তিনি সকল বিষয় জানেন ও দেখেন।আমি এখনো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।কেউ যদি যোগাযোগ করেন, তা আমি জানি না।আমার এক মাসে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নাই।এখন প্রতি মাসে একজন করে এডমিনের দ্বায়িত্ব পাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে আরএমপির মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম মুঠোফোন কল দিয়ে নগরীর ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ বানিজ্য বিষয়টি শোনার পরে তিনি বলেন, আমি এখন মিটিং এ আছি এ বিষয়ে পরে কথা হবে বলে লাইনটি কেটে দেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা বলেন, ভুয়া কেস স্লিপের ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক নয়।এরকম প্রমাণ থাকলে অফিসে নিয়ে আসবেন,আমি তাৎক্ষণিকভাবে