ডাঃ আব্দুল মতিন
সহকারী মেডিকেল অফিসার –
আরগন ফার্মাসিউটিক্যালস( আয়ু).
(এক্স) উপ- সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার-
বারিধারা জেনারেল হসপিটাল লিঃ.
> ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ-
> নিরন্তর জ্বর, ব্যথা, সারা শরীরেই ব্যথা, চোখের ওপরে ব্যথা, পেছনে পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা, ডেঙ্গুর আর এক নাম হাড়ভাঙ্গা জ্বর।
> র্যাশ : সারা শরীরে লাল লাল ছোপ ছোপ র্যাশ। সঙ্গে চুলকানি। সাধারণত র্যাশ বের হয় ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে। জ্বর কমার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত র্যাশগুলো বের হয়।
> চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। হতে পারে ইনজেকশনের জায়গা থেকে। রক্তক্ষরণ হতে পারে নাক-মুখ দিয়ে। কালো রক্ত রঞ্জিত মল ত্যাগ করতে পারে রোগী। মূত্রের সঙ্গেও কিন্তু রক্তক্ষরণ হতে পারে
> কাশি-শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হতে পারে পাতলা পায়খানা, বমি এবং পেটের ব্যথা। পেটে পানিও জমে যেতে পারে।
> কখনও কখনও রোগীর জ্ঞানও লোপ পেতে পারে।
> ডেঙ্গু জ্বর কোন লক্ষণ ছাড়াও হতে পারে। শুধুমাত্র জ্বর।
> রক্তক্ষরণসহ হতে পারে। ডেঙ্গু রক্তক্ষরণের জ্বর শক বা শক ছাড়াই নিতে আসতে পারে। ডেঙ্গুতে কমে যেতে পারে ব্লাড প্রেসার।
শরীর হয়ে যেতে পারে ঠান্ডা বরফের মতো যেটা কিনা খারাপ লক্ষণ।
> কখনও কখনও ডেঙ্গুতে বুকে ও পেটে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
> কি পরীক্ষা করবেন:
> CBC, Dengue Ns1 Ag, Dengue IgG, IgM. এগুলোই ডেঙ্গুর প্রাথমিক পরীক্ষা।
> রক্তের সম্পূর্ণ গণনা যা কিনা রক্তের শ্বেতকণিকা ও অনুচক্রিকা কমে যেতে পারে। আর এই অনুচক্রিকা কমাতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কমে যায় রক্তের জলীয় অংশ। ফলে রক্ত লোহিত কণিকার ঘনত্ব বাড়তে থাকে।
> আর তাছাড়া ডেঙ্গু এন্টিবডি করি সাধারণত রোগের ৫ দিন পর থেকে।
ডেঙ্গু এন্টিবডি আইজিএম পজিটিভ হলে (৫ দিন থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত) ধরে নেব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইনফেকশন।
আর যদি আইজিজি বেড়ে যায় তবে ধরে নেব পূর্বতন ইনফেকশন।
> যকৃতের ইনজাইম এসজিপিটি ও এসজিওটিও বেড়ে যায় অল্প পরিমাণে।
> অনেক সময় বুক ও পেটের এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম করে থাকি বুক ও পেটের পানির পরিমাণ দেখার জন্য।
> চিকিৎসা:
> সাধারণত চিকিৎসা তেমনটি লাগে না। কোন অসুবিধা না হলে বাসায় চিকিৎসা দিলেই চলে।
>পর্যাপ্ত বিশ্রাম
> সিরাপ/বড়ি প্যারাসিটামল
> অধিকতর পানীয় খাদ্য যেমন: পানি, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
> যদি অনুচক্রিকা ব্যাপকভাবে কমে এবং রক্তক্ষরণ হয় অথবা রোগী শকে যায় তবে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দেয়া হয়।
> তবে একেবারেই যদি অনুচক্রিকা কমে যায় তবে রক্তক্ষরণ তাৎক্ষণিক রোধ করতে আমরা অনুচক্রিকা দিয়ে থাকি।
এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করা এবং মশারি ব্যবহার করে ডেঙ্গু দমন করা যেতে পারে।
🟢ডেঙ্গু (ডেঙ্গী) জ্বর -কি এবং তা হলে কি কি করনীয় তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে আমরা আরো কিছু কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আসুন জেনে নেইঃ
> রোগের কারণ: ফ্ল্যাভি ভাইরাস বা ডেঙ্গী ভাইরাস যা একটি RNA ভাইরাস।
-ডেঙ্গী ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ আছে।
– ভাইরাসটির বাহক হচ্ছে Aedes aegypti ও Aedes albopictus নামক মশকী (স্ত্রী মশা)।
🔹️রোগের লক্ষণ-
▫️সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর :
– জ্বর 103-105 ° F হয়ে থাকে।
– সাধারণত ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর ২-৭ দিন পর জ্বর দেখা যায়।
– রোগীর সমস্ত শরীরে ব্যাথা হয় । -মেরুদন্ডের ব্যাথা সহ কোমড়ের ব্যাথা এই রোগের বিশেষ লক্ষণ ।
– একে হাড়ভাঙ্গা জ্বর বলে।
▫️ হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর –
– রোগীর নাক , মুখ , দাঁতের মাড়ি ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
– রক্তে প্লেটিলেট ( অণুচক্রিকা ) ভীষণ হ্রাস পায় এবং রক্ত জমাট বাধতে পারে না।
▫️ডেঙ্গু শক সিনড্রোম :
– হেমোকনসেনট্রেশন দেখা দেয়। ( রক্তে তরলের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তকণিকা ও কঠিন পদার্থের ঘনত্ব বৃদ্ধি )
[ হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম অত্যন্ত মারাত্মক]
🔹️ রোগ নির্ণয় :
▫️সেরোলজি : NSI অ্যান্টিজেন এবং IgM ও IgM অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকতে পারে ।
– তীব্র সংক্রামিত রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ চার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
▫️ প্লেটিলেট পরীক্ষা : রক্তের অণুচক্রিকার সংখ্যা ১৫০০০০/ mm^3 এর অনেক নিচে নেমে আসে।
▫️ সেল কালচার ।
🔹️প্রতিকার/ চিকিৎসা :
– রোগীকে এসপিরিন জাতীয় ওষুধ দিলে মারাত্মক পরিণতি দেখা দিতে পারে।
– ব্যাথা ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে।
– পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া।
– যদি রোগীর জ্বর পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্লেটিলেট এর পরিমান কমতে থাকে তাহলে রোগী কে খুবই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এবং প্রয়োজনে>
– রক্তের সাম্যতা রক্ষার জন্য প্লেটিলেট কমে গেলে অনেক সময় প্লেটিলেট ট্রান্সফিউশন এর প্রয়োজন পড়ে।
> ডেঙ্গু মশা যাতে করে বংশ বিস্তার করতে না পারে তার জন্য আমাদের বসবাসের আশেপাশে পরিবেশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরী এবং কোথাও যেন বেশি দিন পানি জমে না থাকে সে দিকে লক্ষ রাখা।
> মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করা।
এধরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা ডেঙ্গু জ্বর থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।