দিন শেষে গরম ভাব কিছুটা কমে আসছে। অক্টোবরের শেষ দিকে গিয়ে এই ভাব আরও বাড়বে, তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে আসবে দিন। কিছুটা হলেও শীতের আমেজ চলে আসবে। শীতকালে আর্দ্রতা কমে যায়, বাড়ে ধুলোবালু। আর তাই ত্বক ও চুলের দরকার হবে বাড়তি যত্ন। অনেকেই চুল ও ত্বকের যত্নে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করে থাকেন। বিভিন্ন উদ্ভিদ, পাতা, বাকল, ফুল ও শিকড়ের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় এসব তেল। পৃথিবীতে প্রায় ৯০ ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল আছে। আসন্ন শীতে রূপচর্চার পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত সমস্যা, মাইগ্রেনের ব্যথা, মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ, বিভিন্ন প্রদাহ, মশার উপদ্রব কমাতে, বিভিন্ন ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করতে এবং ঘরে সুগন্ধি হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যায়।
শীতকালের অন্যতম সমস্যা খুশকি। টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করে এ সমস্যার অনেকটাই দূর করা সম্ভব। কারণ, এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। এ ছাড়া মাথার ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব থাকলে লেমন গ্রাস অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই তেল চুলের গ্রন্থিকোষ মজবুত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, লেমন গ্রাস এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারে অল্প দিনেই কমে আসে খুশকি। এ ব্যাপারে আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ শাহিনা আফরিন বলেন, ‘এই তেলগুলো যদিও ত্বকেই বেশি ব্যবকহৃত হয়, চুলেও এর ব্যবহার কম নয়। বেছে নিতে পারেন লেমন গ্রাস ও জিরেনিয়াম অয়েল।’
অবসাদ ও ঘুমের সমস্যা দূর করতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অ্যারোমাথেরাপি। এ থেরাপিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এসেনশিয়াল অয়েল। মূলত, নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় এই তেল। এটা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, বাড়ায় ঘ্রাণশক্তি। শাহিনা আফরিন বলেন, বহু বছর ধরে ত্বকে জাফরানি ও ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই তেল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। অন্যদিকে, লেমন অয়েল অথবা অরেঞ্জ অয়েল শরীরে মালিশ করার সময় ব্যবহৃত হয়। বারগামট অয়েল সাধারণত কমলালেবু মতো (সাইট্রাস বারগামট) ফল থেকে নির্যাসকৃত তেল। ২০১৩ সালের একটি গবেষণা বলছে, অ্যারোমাথেরাপিতে বারগামট তেল ব্যবহারে মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ কমে। এই তেল আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করায়। এ ছাড়া এই তেলে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা আমাদের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
ব্রণ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়টি টি ট্রি অয়েল। সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ না করে কোনো প্যাক বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে এটি ব্যবহার করা উচিত। অ্যালোভেরা ও গোলাপজলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করলে অনেক বেশি উপকার পাবেন। রাতে ঘুমানোর সময় টি ট্রি অয়েল অন্য যেকোনো তেল বা ক্রিমের সঙ্গে তিন থেকে চার ফোঁটা মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারবেন। সকালে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ব্রণ অনেকটাই কমে আসবে। সারা রাত না রাখতে চাইলে ৪০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এই তেল ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও সতেজ রাখে ত্বক। খুশকি দূর করে এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হলে দূর করতে সাহায্য করে।
পেপারমিন্ট অয়েলে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ। পাশাপাশি এটি রূপচর্চার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। ত্বক উজ্জ্বল করে, দূর করে ত্বকের মলিনতা। এতে রয়েছে একধরনের মেন্থল, যা ত্বক ঠান্ডা রাখে। ঠান্ডা-কাশির সময় কয়েক ফোঁটা তেল পানিতে দিয়ে ভাপ নিলে আরাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া স্ক্রাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বাড়িতে যেকোনো তেল, যেমন জলপাই তেলের ভেতর তিন থেকে চার চা-চামচ পেপারমিন্ট অয়েল ও লবণ মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্ক্রাবার।
ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা, যেমন সর্দি, কাশি, সাইনাস, ব্রঙ্কাইটিস সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ইউক্যালিপটাস অয়েল। মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও সাহায্য করে ইউক্যালিপটাস অয়েল। এ ছাড়া বিভিন্ন কীটপতঙ্গ দূর করতেও এই তেল ব্যবহার করা হয়।
কোনো এসেনশিয়াল অয়েলই সরাসরি চুলে ব্যবহার করা ভালো নয়। ত্বকে প্রদাহ হতে পারে। জলপাই তেল, নারকেল তেল ও ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলে দিতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েই এটি ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া শ্যাম্পুর সঙ্গেও কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ল্যাভেন্ডার অয়েল চুল সতেজ রাখে, রোজ অয়েল চুলের বৃদ্ধি ঘটায়, চুল নরম রাখে, সিডারউড অয়েল মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। হালকা উষ্ণ পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে নিন। তুলার বলে লাগিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি চোখ, নাক অথবা সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
ঘরে শিশু অথবা গৃহপালিত পশুপাখি থাকলে তাদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁদের আগে কনুই বা হাতে ব্যবহার করে দেখা উচিত। ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সেটা ব্যবহার করা উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় এই তেল ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করে বাইরে বের হলে ত্বকে পোড়া ভাব হতে পারে।
এসেনশিয়াল অয়েল সাধারণত ১ থেকে ৩০ মিলিলিটারের ভেতর পাওয়া যায়। দাম ২০০ থেকে ৮ হাজার টাকা।
সূত্র: প্রথম আলো