মোঃ এনামুল হক আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক ও গবেষক
১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে যারা পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিল তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সাল থেকে শত্রু সম্পত্তির নতুন নাম দেওয়া হয় অর্পিত সম্পত্তি।
পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি আইনানুগভাবে প্রকৃত মালিককে প্রত্যর্পণের জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অর্পিত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকার গেজেটে এবং অন্যান্য অর্পিত সম্পত্তি ‘খ’ তালিকার গেজেটে প্রকাশ করা হয়।
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর অর্পিত সম্পত্তি আইন চালেঞ্জ করে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আবদুল হাই জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের দায়ের করলে আদালত রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে মতামত ও নির্দেশনা দেন।
হাইকোর্টের মতামত ও নির্দেশনায় বলা হয় –
ভবিষ্যতে আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করা যাবে না,
প্রতিটি জেলায় সম্পত্তি অর্পিত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা,
প্রতি জেলায় আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় মামলা নিষ্পত্তি করা,
মামলা ফাইলের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রয়োগ করা,
ট্রাইব্যুনাল বা আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় নির্দিষ্ট সময় বাস্তবায়ন করা,
সরকারের দখলে থাকা দাবিহীন অর্পিত সম্পত্তি মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা,
প্রয়োজনীয় আইন করে যে সম্পত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর নামকরণে মূল মালিককে অন্তর্ভুক্ত করা এবং যেসব অর্পিত সম্পত্তি অপ্রত্যর্পণযোগ্য সেই ক্ষেত্রে মালিককে আইন করে ক্ষতিপূরণ দেয়া।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় আপিল দায়ের করে এবং শুনানি শেষে গত ২ জুন আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেন, ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে প্রণীত আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠন, নির্দিষ্ট সময় মামলা নিস্পত্তি, তামাদি আইন প্রয়োগ, ডিক্রি বাস্তবায়ন, আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন, অর্পিত সম্পত্তি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধানগুলি আছে।
রায়ে বলা হয়, আদালত কোনও আইন করার বিষয়ে ম্যানডামাস ইস্যু করতে পারে না, সরকারের নিকট ন্যাস্ত সম্পত্তির বিষয় সরকারের উপর আইন করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
আদালত রায়ে আরও বলেন, ভবিষ্যতে আর কোনও সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত না করার বিষয়ক নির্দেশনা নিরর্থক। কারণ আপিল বিভাগ ইতিপূর্বে দেওয়া রায়ে ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পরে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্তি বে-আইনি ঘোষণা করেছে।
অর্পিত সম্পত্তির সর্বশেষ আইনে রিট করার কোন সুযোগ নেই। অর্পিত সম্পত্তির জন্য, প্রতি জেলায় অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল ও আপীল ট্রাইবুনাল আছে। আপীল ট্রাইব্যুনালের রায়ই চুড়ান্ত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশন বা আপীলেট ডিভিশনেও আপীল করার সুযোগ নেই।
রোকনুজ্জামান রোকন কর্তৃক সম্পাদিত
© All rights reserved