শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন

অতিথি পাখিদের কলকাকলি ও কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আত্রাই নদীর দুপাশের মানুষের 

মো.আককাস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক 
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ১২৪ জন দেখেছেন

মো.আককাস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক :

শীত এলেই চলে আসে অতিথি পাখিরা দলবেঁধে আত্রাই নদীতে। ওইসব অতিথি পাখিদের কলকাকলি ও কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আাত্রাই নদীর কোল ঘিসে থাকা বসতবাড়ি মানুষের। সকালের স্নিগ্ধ কুয়াশায় আর মৃদু রোদের ফাঁক দিয়ে যেন ভেসে আসে কিচিরমিচির শব্দ। নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিযায়ী পাখির জলকেলি এবং কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে নদীর দুই পাশ। তাদের আগমনে প্রকৃতি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। পাখিকে ঘিরে এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানিয়েছেন পর্যটকরা।

 

এক যুগ ধরে শীতের শুরুতে দল বেঁধে আসতে শুরু করে ওইসব অতিথি পাখিরা। আবাস গড়ে তোলে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর তীরের পুরো কুঞ্জবন ও বুড়াশীবতলা এলাকাজুড়ে। নদীর স্বচ্ছ পানিতে চোখ পড়লেই দেখা মিলবে হাজারো পরিযায়ী পাখির। চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ ঘটেছে এখানে।

 

এছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজাহাঁস, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২জাতের দেশি পাখির দেখা মিলবে। এসব পরিযায়ী পাখি প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর স্বচ্ছ পানিতে করছে জলকেলি। কখনও জলে ভাসতে ভাসতে আবার কখনও দল বেঁধে উড়ছে নদীর চারপাশে।

 

একসঙ্গে ওঠানামা করতে গিয়ে পা আর পাখার ঝাপটায় চারদিকে ছিটকে পড়া পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে এক অপরূপ দৃশ্য। সারাদিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর ও মধুবসহ এলাকার বিভিন্ন গাছে। ভোরে আবারও ফিরে আসে আত্রাই নদীতে। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে দুর দূরান্ত থেকে আসছেন পাখিপ্রেমিরা। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য আবাস করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।

 

পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থী হাসান আলী, সরদার শহিদুল ইসলাম,মাসুদ রানাসহ অনেকেই বলেন এখানে এসে অতিথি পাখি দেখে মনটা ভরে যায়। খুব সুন্দর পরিবেশ ও মনোমুগ্ধকর এই জায়গা। অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ। এলাকাটিতে যদি পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলা যায় সেক্ষেত্রে প্রতি বছর এখানে পরিযায়ী পাখি আরো বেশি করে আসতো।

 

এইসব পাখিকে ঘিরে এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জোর দাবী জানান পাখি প্রেমিকেরা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে। এখানে যাতে কোনক্রমেই ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয় সেদিকে প্রশাসন ও স্থানীয়দের সুদৃষ্টি রয়েছে।

 

এলাকার পাখি গবেষক ও জীব বৈচিত্র্য সংগঠনের পরিচালক পাখা প্রেমিক মুনসুর সরকার বলেন এখানে আগত অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা প্রদানে আমরা কাজ করে আসছি। পাখিদের বিচরন স্থানগুলোকে অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করতে প্রশাসনের সঙ্গে একাত্ত হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। শুধু অতিথি পাখিই নয় পুরো দেশের পরিবেশে ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর।

 

মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আত্রাই নদীতে যেসব স্থান পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে সেই সব স্থানে যাতে কেউ নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্থ না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে।

 

এছাড়া কেউ যদি পাখি শিকার করে, আমরা জানতে পারলে বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু হাসান বলেন আত্রাই নদীতে যেসব স্থান পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে সেই সব স্থানে যাতে কেউনৌ কা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সেই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিথি পাখিদের আবাসস্থলকে নিরাপদ করে অভয়ারন্যে পরিণত করে পর্যটকমুখি করতে গৃহিত পদক্ষেপগুলো দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com