শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

চৌদ্দগ্রামে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট সময় : শনিবার, ১ জুন, ২০২৪
  • ৬৫ জন দেখেছেন

 

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চোর সন্দেহে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে মো: মহিন উদ্দিন প্রকাশ গাউয়া চোর (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। তবে, নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার সহ পরিবারের দাবি পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। নিহত মহিন উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (০১ জুন) ভোরে গুনবতী ইউনিয়নের চাপাচৌঁ গ্রামে। শনিবার বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা গেছে, মহিন উদ্দিন চুরি-ডাকাতি ও ইভটিজিংসহ একাধিক মামলার আসামী। সাম্প্রতিক সময়ে সে জামিনে মুক্তি পায়। শুক্রবার দিবাগত রাতে গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচৌঁ গ্রামে সরোয়ার আলম নামে জনৈক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি করে পার্শ্ববর্তী বাড়ি কোব্বাত মেম্বারের বাড়ির সামনে লুকিয়ে রাখে। একইদিন ভোর রাতে আবার মহিন উদ্দিন সরোয়ার আলমের বাড়িতে গিয়ে তাদের একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরি করার সময় সরোয়ারের পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে চোর-চোর বলে শোর-চিৎকার করে। এ সময় আশ-পাশের লোকজন মহিন উদ্দিনকে ধাওয়া করে একই এলাকার ধনড়া ঈদগাহ নামকস্থানে আটক করে গণপিটুনি দিলে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। সংবাদ পেয়ে মহিন উদ্দিনের ছোট বোন সালমা আক্তার ও তার স্বামী নাঈম তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার লিমা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী একসময় খারাপ পথে চলাচল করতো। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সংসারে আরো একটি সন্তান দুনিয়াতে আসার সংবাদ পেয়ে সে আল্লাহর নামে শপথ করে সকল অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যায়। বর্তমানে সে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা নিজগ্রাম খাটরা ছেড়ে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ট্রেনিং সেন্টার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। গত শুক্রবার সকালে আমাকে নিয়ে সে মোটরসাইকেলযোগে পরিকোট এলাকায় যায়। সেখানে তাঁর পূর্ব পরিচিত বন্ধু রুবেল ও রাজিব মোটরসাইকেলটি আটক করে চাঁদা দাবি করে। এ সময় তারা টাকা না দিলে মীর আহম্মেদ তোয়ান নামে এক সন্ত্রাসীর হাতে তাকে তুলে দিবে বলে ভয়ভীতিও দেখায়। আমরা ভীতস্থ হয়ে ১১ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চৌদ্দগ্রামের বাসায় ফিরে আসি।’

আকলিমা আক্তার লিমা আরও বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মায়ের বাজার শেষ হয়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেলযোগে কাঁচাবাজার নিয়ে সে পুনরায় খাটরা গ্রামে যায়। কাজ শেষে সেখান থেকে তার বোনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী দশবাহা গ্রামে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোনে কল গেলেও কেউ ফোনটি রিসিভ করেনি। শনিবার ভোরে আমার ননদ সালমা আক্তারের মাধ্যমে জানতে পারি, তাকে পিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মীর আহম্মেদ তোয়ানের সাথে দেখা করি। সে আমার সাথে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে আমরা ধনড়া ঈদগাহ এলাকায় গিয়ে দেখি, মহিন উদ্দিন মাটিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা মনে করছি, তাকে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ এ সময় তিনি মহিন উদ্দিন হত্যার বিচার চান।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো: আসিফ ইকবাল বলেন, ‘গণপিটুনিতে আহত মহিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমাদের এখানে তাকে কোন চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হয়নি।’

কনকাপৈত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ, উপ-পরিদর্শক মফিজুর রহমান বলেন, ‘মহিন উদ্দিন একজন চিহ্নিত চোর। শনিবার ভোরে ওই এলাকায় চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাতে চুরি করতে গিয়ে জনতা তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির অরো খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com